শনিবার, ডিসেম্বর ১৩, ২০২৫
Homeবাণিজ্যপাঁচ মাসে ২৫১ কোটি ডলার ক্রয় করল বাংলাদেশ ব্যাংক

পাঁচ মাসে ২৫১ কোটি ডলার ক্রয় করল বাংলাদেশ ব্যাংক

অনলাইন ডেস্ক. দেশে ডলারের চাহিদা ও সরবরাহের ভারসাম্য বজায় রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়মিত বাজার থেকে ডলার কিনছে। গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংক ১৩টি বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে মোট ২০২ মিলিয়ন ডলার ক্রয় করেছে। গতকালের ক্রয়মূল্য ১২২.২৭ থেকে ১২২.২৯ টাকা, যেখানে কাটঅফ রেট ১২২.২৯ টাকা। এর ফলে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মোট ডলার ক্রয় দাঁড়াল দুই হাজার ৫১৪ মিলিয়ন বা ২৫১ কোটি ৪০ লাখ ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বক্তব্য অনুযায়ী, এই ক্রয় বাজারকে স্থিতিশীল রাখতে এবং ডলারের কৃত্রিম মূল্য ওঠানামা রোধ করার জন্য করা হচ্ছে। তবে দেশের আমদানিকারকরা মনে করছেন, এই নিয়মিত ক্রয় বাজারে সরবরাহ কমাচ্ছে এবং ডলারের দাম বাড়াচ্ছে, যা আমদানির খরচ ও মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব ফেলছে।

আইএমএফের ঋণচুক্তির শর্ত অনুযায়ী গত মে মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারভিত্তিক বিনিময় হার পদ্ধতি চালু করেছে। এর পর থেকে ব্যাংকগুলো চাহিদা ও সরবরাহের ভিত্তিতে ডলারের দাম নির্ধারণ করছে।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে এলসি খোলার প্রবণতা বৃদ্ধি, রমজান সামনে রেখে প্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি এবং আমদানিসংক্রান্ত বিধি-নিষেধ কিছুটা শিথিল হওয়ায় ডলারের চাহিদা বেড়েছে।

চট্টগ্রামের এক শীর্ষ ব্যবসায়ী গ্রুপের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘রমজানের আগে চাহিদা বাড়া স্বাভাবিক, কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন একই সময় বাজার থেকে ডলার কিনছে, তখন দাম বাড়ার চাপ আরো বেড়ে যাচ্ছে। বছরের শেষের দিকে ব্যাংকগুলো অতিরিক্ত মুনাফা নিতে প্রায়ই ডলারের দাম বাড়ায়। এতে আমদানির খরচ বৃদ্ধি পায় এবং ব্যবসায়ীদের জন্য আর্থিক চাপ তৈরি হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘আমরা বাজারে কৃত্রিম হস্তক্ষেপ করছি না। ডলার কেনা হচ্ছে শুধু অতিরিক্ত ডলারধারী ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে নিলামের মাধ্যমে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রপ্তানি আয় এবং প্রবাস আয় উভয় ক্ষেত্রেই ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। এর ফলে বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়েছে এবং নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে কেনা হচ্ছে, যাতে বাজার স্থিতিশীল থাকে।’

বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার ব্যবস্থা চালু হওয়া সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্রয় নীতি, উচ্চ চাহিদার সময় সামঞ্জস্যপূর্ণ না হলে ডলারের দাম বৃদ্ধি পেতে পারে।

এতে আমদানি খরচ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মূল্যস্ফীতির চাপও বৃদ্ধি পেতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নীতিনির্ধারকদের জন্য প্রয়োজন সতর্ক ও সমন্বিত পদক্ষেপ, যাতে বাজারে সরবরাহ ও চাহিদার ভারসাম্য বজায় থাকে এবং আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত আর্থিক চাপের সম্মুখীন না হন।

রপ্তানিকারক ও প্রবাসীদের স্বার্থ রক্ষায় দাম ধরে রাখতে গত জুলাই থেকে নিয়মিত ডলার কেনার সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত নভেম্বর মাসে বিভিন্ন পণ্যের ৫৫৬ কোটি ৬৬ লাখ ডলারের আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়েছে। একই মাসে এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ৪৮৬ কোটি ৯৯ লাখ ডলার। সব মিলে চলতি অর্থছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) এলসি খোলা হয় দুই হাজার ৯৪১ কোটি ডলার। এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১২৯ কোটি ২৬ লাখ ডলার বা ৪.৫৯ শতাংশ বেশি। তবে প্রথম পাঁচ মাসের হিসাবে এলসি নিষ্পত্তি কমেছে প্রায় ৭৪ কোটি ডলার বা ২.৬৬ শতাংশ। এ সময় বিভিন্ন পণ্যের এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে দুই হাজার ৭১৯ কোটি ৪৫ লাখ ডলার।

এ জাতীয় আরো সংবাদঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

জনপ্রিয় সংবাদঃ

সাম্প্রতিক মন্তব্য