বাগেরহাট প্রতিনিধি.বাগেরহাটের ফকিরহাটে প্রায় পাঁচশত বছরের প্রাচীন শিবমন্দিরের সুড়ঙ্গে গুপ্তধনের সন্ধানে অবৈধ খনন তৎপরতা শুরু হয়েছে। শতাব্দীর পর শতাব্দী সংস্কারহীন ও নিরাপত্তাহীনতায় থাকা এই ঐতিহাসিক স্থাপনাটির সামান্য ধ্বংসাবশেষ অবশিষ্ট রয়েছে। প্রশাসনের নজরদারির অভাবে প্রতিদিনই বাড়ছে ঝুঁকি। উদ্বিগ্ন স্থানীয় সনাতন সম্প্রদায়। লোকমুখে প্রচলিত আছে, মন্দিরের ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গে স্বর্ণের মূর্তি, কষ্টি পাথরের মূর্তি, স্বর্ণমুদ্রা, স্বর্ণের তৈজসপত্রসহ বিপুল গুপ্তধন রয়েছে।
বুধবার সরেজমিন দেখা যায়, চুন, সুরকি ও পোড়ামাটির তৈরি জোড়া শিবমন্দির দুটি ভঙ্গুর অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। খসে পড়া পলেস্তারা ও ফাটলের ভেতর গাছ জন্মে তা আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। একটু দূরে বন-জঙ্গলের ভেতর মন্দিরের সুড়ঙ্গের পাশে স্তূপকৃত সদ্য খনন করা মাটি।
উপজেলার পিলজংগ ইউনিয়ন পরিষদের উত্তর-পশ্চিম কোণে ৫ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় অবস্থিত দুটি প্রাচীন ধ্বংসপ্রায় জোড়া শিবমন্দি। মন্দির দুটিতে থাকা অত্যন্ত দামি দুটি কষ্টিপাথরের মূর্তি প্রায় ২৫ বছর আগে চুরি হয়ে গেছে। তিন বছর আগে ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে ৪০ দিনের কর্মসূচির বরাদ্দ থেকে মন্দিরের প্রবেশপথ সংস্কার ও জঙ্গল পরিষ্কার করা হয়। এরপর থেকে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ওই মন্দিরে ভক্তদের উপস্থিতি বাড়ে।
এর একটু দূরে অন্য একটি মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ বন-জঙ্গলে লোকচক্ষুর অন্তরালে ছিল। সম্প্রতি প্রায় ১৫-২০ ফুট উঁচু মাটির ঢিবির ওপর অবস্থিত মন্দিরটির সুড়ঙ্গের ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে রাতের আঁধারে কে বা কারা মাটি খোঁড়ার কাজ করছে। এরই মধ্যে ভূগর্ভস্থ ২৫টি সিঁড়ি পর্যন্ত মাটি খুঁড়েছে। বিষয়টি টের পেয়ে মন্দির কমিটির লোকজন দিনেরবেলা গিয়ে দেখতে পান, সুড়ঙ্গের ভেতরের মাটি অপসারণের কাজে ব্যবহৃত শাবল, ঝুড়ি, কোদাল, বালতি, ত্রিশূল পড়ে রয়েছে।
মন্দিরটি সংরক্ষণ, অরক্ষিত সুড়ঙ্গ খনন বন্ধ এবং স্থায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন স্থানীয় সনাতনী সম্প্রদায়ের মানুষজন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুমনা আইরিন জানান, এ বিষয়ে তিনি আগে জানতেন না। তবে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান।
বাগেরহাট প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কাস্টোডিয়ান মো. যায়েদ বলেন, ‘মন্দিরটি অনেক পুরোনো। বছর দুই আগে আমি এটি ভিজিট করেছিলাম। সুড়ঙ্গ খোঁড়ার বিষয়টি আমি জানতাম না। তবে এটি সংরক্ষণ করা উচিত।’
