অনলাইন ডেস্ক: দেশে ষাটোর্ধ্ব বয়সের ব্যক্তিদের আক্রান্তের নমুনা থাকলে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর বড় কারণ প্রতিকার ও প্রতিরোধযোগ্য রোগ নিউমোনিয়া। আর এই রোগে আক্রান্ত ও মৃত্যু বেশি। দুটিই বেশি ঘটছে গ্রামাঞ্চলে। গবেষণা বলছে, নিউমোনিয়ায় মারা যাওয়া শিশুর অর্ধেকের বেশি চিকিৎসা শুরুর আগেই মারা যাচ্ছে। এর কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা গেছে, দেশের জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রায় ৯৫ শতাংশ হাসপাতালে নিউমোনিয়া চিকিৎসার পর্যাপ্ত সুযোগ নেই। ফলে একদিকে বাড়ছে প্রাণহানি, অন্যদিকে জীবন বাঁচাতে বাধ্য হয়ে ঢাকামুখী হচ্ছে মানুষ।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও যথাযথ চিকিৎসায় শিশুমৃত্যুহার কমিয়ে আনা সম্ভব। সেইসঙ্গে নিউমোনিয়া প্রতিরোধী টিকাদান কর্মসূচিতেও জোর দিচ্ছেন তারা।
আজ বুধবার বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস। দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট এবং বাংলাদেশ নিউনেটাল ফোরাম একটি সেমিনার, সচেতনতামূলক র্যালিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দিবস উপলক্ষে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
শিশুদের চিকিৎসায় দেশের সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্যকেন্দ্র শ্যামলী বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট। চলতি বছর এখন পর্যন্ত প্রায় আড়াই হাজার শিশুকে ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন অসুস্থতা নিয়ে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১৫ শতাংশই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। মৃত্যু হয়েছে অন্তত অর্ধশত শিশুর।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বাংলাদেশে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে ৯৫ শতাংশ হাসপাতালে নিউমোনিয়া চিকিৎসার সুব্যবস্থাপনা নেই। যে কারণে ফুসফুস সংক্রমণ দেখা দেওয়ার পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে ৪২ শতাংশ চিকিৎসা নেওয়ার জন্য নিকটের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেওয়া হয়। অন্য কোনো চিকিৎসাসেবা না থাকায় ৩৪ শতাংশ শিশুকে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ দেওয়া হয়। অভিভাবকদের অসচেতনতা এবং সরকারি হাসপাতালে অক্সিজেন মাপার যন্ত্রসহ নানা সংকটে দেশে পাঁচ বছর ধরে মৃত্যুর হার প্রায় একই।
অন্যদিকে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর-বি) তথ্যমতে, এখনো জীবিত জন্ম নিয়ে প্রতি হাজারে প্রায় ৭ দশমিক ৪ জন শিশু নিউমোনিয়ায় প্রাণ হারাচ্ছে। রক্তে অক্সিজেনের ঘাটতি (হাইপক্সেমিয়া) এ রোগে এত মৃত্যুর বড় কারণ।
বাংলাদেশ হেলথ ফ্যাসিলিটির জরিপ বলছে, প্রতি বছর লাখের বেশি শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়, যার ৫২ শতাংশই চিকিৎসার বাইরে থেকে যাচ্ছে। সঠিক সময় চিকিৎসাকেন্দ্রে না আসার কারণে মারা যায় ৪৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পেডিয়াট্রিকস পালমনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. কামরুজ্জামান (কামরুল) বলেন, আমাদের হাসপাতালে নিউমোনিয়ার রোগীর অধিকাংশই শহরের বাইরে থেকে আসা। তারা খারাপ অবস্থা নিয়েই আসছে, ফলে সুস্থ হয়ে ফেরা কঠিন।
তিনি বলেন, প্রান্তিক পর্যায়ে জ্বর, ঠান্ডা, কাশিতে শিশুকে পল্লি চিকিৎসকের কাছে, অবস্থা ক্রমাগত খারাপ হলে চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হোন অভিভাবকরা; কিন্তু শিশুর হাইপক্সেমিয়া (অক্সিজেনের ঘাটতি) প্রতিরোধের ব্যবস্থাপনা উপজেলা হাসপাতালে খুব একটা নেই। সেখান থেকে জেলা সদর বা বিভাগীয় হাসপাতাল, তার আসে ঢাকায়। পরিবহন ব্যবস্থার দরূন পথেই রোগী গুরুতর অবস্থায় চলে যায়, এর সঙ্গে সীমিত শয্যার ব্যবস্থা করতে চিকিৎসা শুরুর আগেই অনেকের মৃত্যু হয়।
বাংলাদেশ পেডিয়াট্রিকস পালমনোলজি ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. আতিয়ার রহমান বলেন, নিউমোনিয়ায় মৃত্যুর বড় কারণ অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার। দেখা যাচ্ছে, ভাইরাল নিউমোনিয়া হলেও অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হচ্ছে, যার ফলে আক্রান্তকে সঠিক সময়ে অ্যান্টিবায়োটিক দিলেও আর কাজ হয় না।
