সোমবার, ডিসেম্বর ৮, ২০২৫
Homeজাতীয়৪ লাখের বেশি এইচএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন

৪ লাখের বেশি এইচএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন

নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি বছর এইসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলে অসন্তোষ জানিয়ে রেকর্ডসংখ্যক শিক্ষার্থী খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন করেছেন। এবার ৪১ দশমিক ১৭ শতাংশ শিক্ষার্থী ফেল করে, সংখ্যার হিসাবে যা ৫ লাখের বেশি। এছাড়া জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও গত বছরের তুলনায় অর্ধেক কমেছে। এর প্রভাব পড়েছে এইসএসসির ফল পুনর্নিরীক্ষণের আবেদনে। অসন্তুষ্টদের মধ্যে এবার ১ লাখ ৯৩ হাজার ২৫৮ পরীক্ষার্থী মোট ৪ লাখ ২৮ হাজার ৪৫৮টি খাতা চ্যালেঞ্জ করেছেন। তবে এসব খাতা পুনর্নিরীক্ষণ নয়, পুনর্মূল্যায়নের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা। তবে শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা বলেন, আইন পরিবর্তন ছাড়া পুনর্মূল্যায়ন সম্ভব নয়। আগামী ১৬ নভেম্বর এইচএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের ফল প্রকাশ করা হবে।

gnewsদৈনিক ইত্তেফাকের সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন করা শিক্ষার্থীর উত্তরপত্রের চারটি দিক দেখা হয়। সেগুলো হলো—উত্তরপত্রে সব প্রশ্নের সঠিকভাবে নম্বর দেওয়া হয়েছে কি না, প্রাপ্ত নম্বর গণনা ঠিক রয়েছে কি না, প্রাপ্ত নম্বর ওএমআর শিটে উঠানো হয়েছে কি না এবং প্রাপ্ত নম্বর অনুযায়ী ওএমআর শিটের বৃত্ত ভরাট করা হয়েছে কি না। এ চার জায়গায় কোনো ভুল থাকলে তা সংশোধন করে নতুন করে ফল প্রকাশ করা হয়। আবেদনকারীদের মধ্যে যাদের ফলাফল পরিবর্তন হবে, তাদের এসএমএসের মাধ্যমে প্রাপ্ত ফল জানিয়ে দেওয়া হবে। এছাড়া বোর্ডের ওয়েবসাইটে সংশোধিত ফল পাওয়া যাবে। রাজধানীর এক জন শিক্ষার্থীর মা বলেন, তার সন্তানের ধর্ম বিষয়ের উত্তরপত্র যেন পুনর্মূল্যায়ন করা হয়। কারণ, সব বিষয়ে জিপিএ-৫ পেলেও ঐ বিষয়ে ৭৯ নম্বর পেয়েছে। এতে জিপিএ-৫ হাতছাড়া হয়েছে। রবিউল ইসলাম নামক এক জন শিক্ষার্থী বলেন, শুধু পুনর্নিরীক্ষণেই প্রতি বছর হাজার ভুল ধরা পড়ছে। পুনর্মূল্যায়নের সুযোগ থাকলে আরও বেশি ভুল ধরা পড়বে দাবি করে তিনি বলেন, আমাদের দাবি খাতা পুনর্মূল্যায়ন করা হোক। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের এক জন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, তারা কেবল শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের অনুমোদিত নীতিমালা অনুযায়ী পরীক্ষা গ্রহণ ও ফল প্রকাশ করেন। এখন ফল প্রকাশের পর শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পক্ষ থেকে পুনর্মূল্যায়নসহ অন্য যেসব দাবির কথা বলা হচ্ছে, সেগুলোর বিষয়ে আলোচনা করে কীভাবে পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সে বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে জানাবেন তারা।

শিক্ষা বোর্ড সূত্র বলছে, ৬০ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশের নিয়ম থাকায় পরীক্ষকদের মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করতে হয়। যা সঠিক মূল্যায়নের জন্য কম সময় বলে অভিযোগ আছে। বিদ্যমান নিয়মে বেশ কয়েক জন বিষয়ভিত্তিক পরীক্ষকের বিপরীতে এক জন প্রধান পরীক্ষক থাকেন। তার অধীনে আবার দুই জন নিরীক্ষক (শিক্ষক) থাকেন। পরীক্ষকেরা উত্তরপত্রগুলো মূল্যায়ন করে নির্ধারিত শিটে (ওএমআর শিট) নম্বর দিয়ে প্রধান পরীক্ষকের কাছে পাঠান। নম্বর যোগ-বিয়োগ সঠিক হয়েছে কি না, তা নিরীক্ষকেরা দেখেন। আবার প্রধান পরীক্ষকের দায়িত্ব তার অধীন মূল্যায়ন হওয়া উত্তরপত্রের ১২ শতাংশ নিজে আবার দেখা। যদিও অভিযোগ আছে, এই কাজগুলো প্রায় সময়ই ঠিকমতো হয় না। এবার এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অংশ নিয়েছিলেন ১২ লাখ ৩৫ হাজার ৬৬১ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছেন ৭ লাখ ২৬ হাজার ৯৬০ জন পরীক্ষার্থী। বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন করেছেন ৬৬ হাজার ১৫০ জন পরীক্ষার্থী, মোট আবেদন পড়েছে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৫০৬টি খাতা। বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে ৮ হাজার ১১১ জন পরীক্ষার্থী ১৭ হাজার ৪৮৯টি খাতা, কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে ২২ হাজার ১৫০ জন পরীক্ষার্থী ৪২ হাজার ৪৪টি খাতা, রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে ২০ হাজার ৯২৪ জন পরীক্ষার্থী ৩৬ হাজার ২০৫টি খাতা, যশোর শিক্ষা বোর্ডে ২০ হাজার ৩৯৫ জন পরীক্ষার্থী ৩৬ হাজার ২০৫টি খাতা, চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে ২২ হাজার ৫৯৫ জন পরীক্ষার্থী ৪৬ হাজার ১৪৮টি খাতা, সিলেট শিক্ষা বোর্ডে ১৩ হাজার ৪৪ জন পরীক্ষার্থী ২৩ হাজার ৮২০টি খাতা, দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে ১৭ হাজার ৩১৮ জন পরীক্ষার্থী ২৯ হাজার ২৯৭টি খাতা, ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডে ১৫ হাজার ৫৯৮ জন পরীক্ষার্থী ৩০ হাজার ৭৩৬টি খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন করেছে। বিএম-ভোকেশনালে খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন করেছেন ১২ হাজার সাত জন পরীক্ষার্থী, মোট আবেদন করা হয়েছে ১৫ হাজার ৩৭৮টি খাতা। আলিমে খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন করেছেন ৭ হাজার ৯১৬ জন পরীক্ষার্থী, মোট আবেদন করা হয়েছে ১৪ হাজার ৭৩৩টি খাতা।

এর আগে গত ১৭ অক্টোবর শুরু হয় ফল পুনর্নিরীক্ষণ বা খাতা চ্যালেঞ্জ। ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন শুধু অনলাইনে করা যাবে। অন্যান্য বার এসএমএসের মাধ্যমেও এ সুযোগ ছিল। শিক্ষা বোর্ড, শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা অন্য কোনো অফিসে সরাসরি আবেদন গ্রহণ করা হবে না। এ বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল ১৬ অক্টোবর প্রকাশ করা হয়েছে। এ বছর ১১টি শিক্ষা বোর্ডে পাশের হার ৫৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৬৯ হাজার ৯৭ জন পরীক্ষার্থী।

এ জাতীয় আরো সংবাদঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

জনপ্রিয় সংবাদঃ

সাম্প্রতিক মন্তব্য