রনি মজুমদার. প্রায় ৬৬ বছর আগে ইস্টার্ন মার্কেন্টাইল ব্যাংকে (বর্তমানে পূবালী ব্যাংক) করা বিনিয়োগের শেয়ার ফেরত চেয়েছে সোনালী ব্যাংক। ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান নামে পরিচিত ওই ব্যাংক (যা পরে সোনালী ব্যাংক নামে রাষ্ট্রায়ত্ত হয়) ১৯৫৯ সালে এই বিনিয়োগ করেছিল।
এ নিয়ে দুই ব্যাংকের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চিঠি চালাচালি ও একাধিক বৈঠক হয়েছে। সম্প্রতি সোনালী ব্যাংক আবারও সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে চিঠি দিয়ে হস্তক্ষেপ চেয়েছে।
৫১ হাজার ২২টি শেয়ার ফেরত দাবি
অর্থ মন্ত্রণালয়কে দেওয়া চিঠিতে সোনালী ব্যাংক জানায়, ১৯৫৯ সালে তারা পূবালী ব্যাংকের মোট ৩৮ হাজার ৩৩৫টি শেয়ার ক্রয় করেছিল। ১৯৬৮, ১৯৬৯ ও ১৯৭০ সালে বোনাস শেয়ার যুক্ত হওয়ায় ওই সংখ্যা দাঁড়ায় ৫১ হাজার ২২টি, যার তৎকালীন অভিহিত মূল্য ছিল পাঁচ লাখ ১০ হাজার ২২০ টাকা।
বর্তমানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে পূবালী ব্যাংকের শেয়ারদর প্রতি ইউনিট ২৭ টাকা ৪০ পয়সা হিসেবে এই শেয়ারগুলোর বাজারমূল্য দাঁড়ায় প্রায় ১৪ লাখ টাকা।
বেসরকারীকরণের পর থেকে অনিষ্পন্ন দাবি
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ইস্টার্ন মার্কেন্টাইল ব্যাংকের নাম হয় পূবালী ব্যাংক এবং ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান পরিবর্তিত হয়ে সোনালী ব্যাংক হয়। দুটিকেই রাষ্ট্রায়ত্ত ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালে পূবালী ব্যাংককে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হয়। সে সময় ‘ভেন্ডর এগ্রিমেন্ট’-এর আওতায় শেয়ার ফেরতের আবেদন করতে বলা হয়েছিল।
অন্য শেয়ারধারীরা আবেদন করে শেয়ার ফেরত পেলেও সোনালী ব্যাংক কোনো কারণে তাদের অংশ ফেরত পায়নি। এরপর থেকে তারা অর্থ মন্ত্রণালয় ও পূবালী ব্যাংকের কাছে একাধিকবার আবেদন ও চিঠি পাঠিয়েছে।
‘দাবি কখনও বিলুপ্ত হয় না’— সরকারি মত
১৯৯৮ সালের ডিসেম্বরে অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে তৎকালীন যুগ্ম সচিব আমিনুর রহমানের সভাপতিত্বে আইন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি মত দেন,
“এ জাতীয় দাবি কখনও বিলুপ্ত হয় না। পূবালী ব্যাংক যদি এ দাবি পরিশোধ না করে, তাহলে দায় সরকারের ওপর বর্তাবে।”
পরে ২০১৬ সালের অক্টোবরে অতিরিক্ত সচিব মো. ফজলুল হকের সভাপতিত্বে আরেকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এরপর বেশ কয়েক দফা চিঠি ও সভা হলেও কোনো সমঝোতা হয়নি। সোনালী ব্যাংক জানায়, গত বছরের ৮ ডিসেম্বর পূবালী ব্যাংকে চিঠি পাঠালেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
পূবালী ব্যাংকের বক্তব্য
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী বলেন,
“১৯৮৩ সালে বেসরকারীকরণের সময় ভেন্ডর এগ্রিমেন্টের আওতায় শেয়ার ফেরত দেওয়ার জন্য শেয়ারধারীদের আবেদন করতে বলা হয়েছিল। আবেদনকারীদের শেয়ার বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। তখনই বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়ে যাওয়ার কথা।”
তিনি আরও জানান,
“বর্তমানে পূবালী ব্যাংকের ব্যালান্স শিটেও সোনালী ব্যাংকের শেয়ার বিনিয়োগের কোনো উল্লেখ নেই।”
