সোমবার, ডিসেম্বর ৮, ২০২৫
Homeশিল্প-সাহিত্যবিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন ১০ সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে আমরা কতটা জানি

বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন ১০ সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে আমরা কতটা জানি

অনলাইন ডেস্ক: মানবসভ্যতার সূচনালগ্ন থেকে মানুষ নিজের অভিজ্ঞতা, কল্পনা ও বিশ্বাসকে ধরে রাখতে চেয়েছে। প্রথমে মৌখিকভাবে এ চেষ্টা করা হয়েছে। এতে লোককথা, আখ্যান, কবিতা, শ্লোক কিংবা মিথের জন্ম হয়েছে। লিপি আবিষ্কার হওয়ার পর সেই চেষ্টায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। জন্ম হয়েছে নাটক, মহাকাব্য, ইতিহাস বা দর্শন–বিষয়ক নানা ধরনের বই লেখার প্রচলন।

আমরা প্রতিদিন যেসব গল্প, উপন্যাস বা কবিতা পড়ি বা সিনেমা-নাটক দেখি, তার শিকড় হাজার বছরের পুরোনো গ্রন্থগুলোতে লুকিয়ে আছে। প্রাচীন সাহিত্যকর্মগুলো শুধু অতীত জানার উপায় নয়; বরং এগুলোতে জীবন কী, আমরা কেন বেঁচে আছি, মানুষ কেন মারা যায়, কেন দুঃখ পায়, আমরা কোথা থেকে এসেছি বা মৃত্যুর পর কী আছে ইত্যাদির মতো চিরায়ত সেসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হয়েছে, যা আজও আমাদের তাড়িয়ে বেড়ায়।

তাই প্রাচীন সাহিত্যকর্মগুলো মানবজাতির সম্মিলিত আত্মজিজ্ঞাসার মূল্যবান দলিল। এখানে বিখ্যাত প্রাচীন ১০ সাহিত্যকর্ম নিয়ে সংক্ষেপে আলোকপাত করা হলো।

১। গিলগামেশের মহাকাব্য

‘গিলগামেশের মহাকাব্য’ বা গিলগামেশকে নিয়ে রচিত মহাকাব্যকে বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন সাহিত্যকর্ম হিসেবে ধরা হয়। প্রায় চার হাজার আগের এই মহাকাব্য লেখা হয়েছিল আকাদীয় ভাষায়। এটি ছিল মেসোপটেমিয়ার প্রাচীন ভাষা। আকাদীয় ভাষায় কিউনিফর্ম লিপিতে পুরো মহাকাব্যটি লেখা হয়েছে।

রাজা গিলগামেশকে নিয়ে রচিত ছোট ছোট কতগুলো কবিতা ও গল্প মহাকাব্যটির উৎস। এসব কবিতা ও গল্প লেখা হয়েছিল সুমেরীয় ভাষায়।

বিশ্বের অন্যান্য অনেক মহাকাব্যের মতো গিলগামেশের একক কোনো রচয়িতা নেই। খ্রিষ্টপূর্ব ১৩০০ থেকে ১০০০ সালের মধ্যে বিভিন্নজনের হাতে দীর্ঘ সময় ধরে ধাপে ধাপে এটি রচিত হয়েছে।

গবেষকদের মতে, গিলগামেশ নামে সত্যিই একজন রাজা ছিলেন। তিনি খ্রিষ্টপূর্ব আড়াই হাজার বছর আগে সুমেরীয় নগররাষ্ট্র উরুকের (বর্তমান ইরাকের ওয়ারকা) রাজা ছিলেন। সুমেরীয় রাজাদের তালিকাতেও তাঁর নাম পাওয়া যায়। গিলগামেশের শাসনকাল ছিল খ্রিষ্টপূর্ব আড়াই হাজার বছর আগে।

মহাকাব্যটি এক রাজকীয় গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত ছিল। খ্রিষ্টপূর্ব ৬১২ সালে ব্যাবিলনের সাম্রাজ্যের সেনারা তা ধ্বংস করে দেন। অনেক পরে উনিশ শতকের মাঝামাঝি বর্তমান ইরাকে গিলগামেশের মহাকাব্যের ১২টি ট্যাবলেট বা মাটির ফলক পাওয়া গেছে, যার অনেকগুলো ভাঙা। গবেষকদের ধারণা, শেষের ট্যাবলেটটি আলাদা সময়ে যুক্ত হয়েছে। এটা পুনরাবৃত্তিমূলক।

পণ্ডিতেরা মনে করেন, গিলগামেশ মহাকাব্য হোমারের ‘ওডিসি’ আরও অনেক মহাকাব্যকে প্রভাবিত করেছে।

২। টেল অব দ্য শিপরেকড সেইলর

‘টেল অব দ্য শিপরেকড সেইলর’কে প্রাচীন মিসরের সবচেয়ে পুরোনো টিকে থাকা লিখিত গল্প বলে ধরা হয়ছবি: স্টোরিনোরি.কমের ওয়েবসাইট থেকে
খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ থেকে ১৯০০ সালের মধ্যে প্যাপিরাস শিটে (একধরনের উদ্ভিদ) ‘টেল অব দ্য শিপরেকড সেইলর’ লেখা হয়েছিল। জেমস পি অ্যালেন তাঁর মিডল ইজিপশিয়ান লিটারেচারে লিখেছেন, এটি ‘প্রাচীন মিসরের সবচেয়ে পুরোনো টিকে থাকা লিখিত গল্প।’

এই গল্পের মূল উৎস কী, তা এখনো রহস্যময় রয়ে গেছে। তবে উনিশ শতকে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরের এক জাদুঘরে বইটির পাণ্ডুলিপি পাওয়া গিয়েছিল। এটি এখনো মস্কোতেই সংরক্ষিত আছে।

অতিপ্রাকৃত উপাদানসমৃদ্ধ গল্পটি মিসরীয় হিয়েরাটিক লিপিতে লেখা। গল্পটি সম্পূর্ণ কি না, তা নিয়ে কিছু বিতর্ক আছে। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, গল্পের শুরুটা আধুনিক পাঠকের কাছে মাঝখান থেকে শুরু হয়েছে বলে মনে হতে পারে। কিন্তু এটি প্রাচীন মিসরীয় কাহিনির একটি খুব সাধারণ শৈলী। তাই ‘টেল অব দ্য শিপরেকড সেইলর’–এর গল্প কম-বেশি প্রায় সম্পূর্ণ বলে ধরা হয়।

৩ । দ্য বুক অব জোব
‘দ্য বুক অব জোব’ বা জোবের গ্রন্থ কবে লেখা হয়েছে, তা নিয়ে বিস্তর বিতর্ক আছে। কিছু গবেষক বলেন, আরমায়িক ভাষা প্রভাবিত হিব্রুর ইঙ্গিত থেকে ধারণা করা হয়, ব্যাবিলনের সভ্যতা ধ্বংসের পর আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ৫৪০ সালের পরে লেখা বইটি লেখা হয়েছে।

কিন্তু কিছু বিষয় থেকে বইটি আরও আগে লেখা হয়েছে বলে মনে করেন অনেকে। তাঁরা যুক্তি হিসেবে বলেন, বইটিতে জোবের সম্পদের হিসাব অর্থের পরিবর্তে পালের পশু ও কর্মচারীর সংখ্যা দিয়ে করা হয়েছে। কিছু গবেষক বইটি খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় ২০০০ সালের কাছাকাছি সময়ে লেখা হয়েছে বলে মনে করেন।

জোব একজন ধনী ও ধার্মিক মানুষ ছিলেন। তাঁর জীবনে হঠাৎ মারাত্মক কষ্ট ও দুর্ভোগ শুরু হয়। সম্পদ ও সন্তান হারান। পাশাপাশি তাঁর ব্যাপক স্বাস্থ্যহানি হয়। মানবকষ্ট, ঈশ্বরের ন্যায় ও বিশ্বাসের পরীক্ষা নিয়ে বইটির গল্প আবর্তিত হয়েছে। ‘সৎ মানুষ কেন কষ্ট পায়’—এটিই এই গ্রন্থের কেন্দ্রীয় প্রশ্ন।

‘দ্য বুক অব জোব’–এর লেখক কে, তা নিয়েও বিতর্ক আছে। কেউ মনে করেন হজরত মুসা (আ.), কেউ মনে করেন হজরত সোলাইমান (আ.) বইটির লেখক। কিন্তু অধিকাংশ পণ্ডিতের মতে, এর প্রকৃত লেখক কে, তা জানা সম্ভব নয়।

৪। কোড অব হাম্মুরাবি

হাম্মুরাবি ছিলেন প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার ব্যাবিলন সাম্রাজ্যের ষষ্ঠ রাজা। তাঁকে মানবসভ্যতার ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আইনপ্রণেতা হিসেবে ধরা হয়। ‘কোড অব হাম্মুরাবি’ তাঁর শাসনামলের শেষদিকে (খ্রিষ্টপূর্ব ১৭৯২-১৭৫০) রচনা করা হয়। এই আইনসংহিতা বা আইনবিষয়ক বই আকাদীয় ভাষায় কালো পাথরের স্তম্ভে খোদাই করা লেখা। একাধিক স্তম্ভে তা লেখা হয়েছিল, যার মধ্যে একটি আজও প্রায় অক্ষত রয়েছে।

‘কোড অব হাম্মুরাবি’ ইতিহাসের প্রথম আইনসংহিতা নয়। ‘উর-নাম্মুর আইন’–এর কয়েক শ বছর আগে লেখা হয়েছিল। এমনকি ‘উর-নাম্মুর আইন’–এর চেয়েও পুরোনো ফরমানের কথা জানা যায়।

ইতিহাসবিদ মার্ক ভ্যান ডি মিয়ারুপের মতে, হাম্মুরাবির আইনকে মানবসভ্যতার প্রাচীন ইতিহাসে ন্যায়বিচার নিয়ে সবচেয়ে সুসংহত ও বিস্তারিত দলিল হিসেবে গণ্য করা হয়। পরবর্তী কয়েক হাজার বছরে কোনো সভ্যতায় এ ধরনের কোনো আইনি গ্রন্থ রচিত হতে দেখা যায়নি।

হাম্মুরাবি নিজেকে ঈশ্বরের প্রতিনিধি মনে করতেন। তিনি নিজের প্রণীত আইন দিয়ে সমাজে শৃঙ্খলা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছিলেন। ওই সময়কার ধারণার ভিত্তিতেই তিনি অধিকাংশ আইন প্রণয়ন করেছিলেন।

‘কোড অব হাম্মুরাবি’তে চোখের বদলে চোখ, দাঁতের বদলে দাঁত নেওয়ার বিধান আছে। তবে সমাজের উচ্চ, মধ্য বা নিম্ন শ্রেণিভেদে অপরাধের শাস্তি নির্ধারণ করা হতো। হাম্মুরাবির গদ্যশৈলীর সঙ্গে বাইবেলের এক্সোডাসের মিল রয়েছে।

৫। দ্য বুক অব দ্য ডেড

‘দ্য বুক অব দ্য ডেড’ বা ‘দ্য বুক অব কামিং ফোর্থ বাই ডে’ প্রাচীন মিসরের সবচেয়ে বিখ্যাত রচনাগুলোর একটি। প্রায় ২০০টি প্যাপিরাস শিটে লেখা সংকলনটির সময়কাল খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০ সাল। তবে এর মূল বিষয়বস্তু নেওয়া হয়েছে আরও পুরোনো লেখাজোখা থেকে।

প্রাচীন মিসরের শেষ পর্ব নিউ কিংডম বা নতুন রাজত্বকালে এই বই লেখা হয়। এটি মূলত প্রাচীন মিসরের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া–সম্পর্কিত একধরনের ধর্মীয় পুঁথি। মৃত ব্যক্তির যাতে নিরাপদে পরলোকে পৌঁছাতে পারেন এবং সফলভাবে দেবতাদের বিচারের মুখোমুখি হতে পারে—এ জন্য বইটির অংশগুলো লেখা হয়েছে। বইটির একেক অংশ একেক ব্যক্তি লিখেছেন। বইটি সাধারণত কফিনের ভেতরে বা কবরস্থানে রাখা হতো।

৬। বেদ

বেদ শুধু ধর্মগ্রন্থ নয়; বরং প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতার জ্ঞানের ভান্ডার। খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০ থেকে ১২০০ সালের মধ্যে বৈদিক সংস্কৃত ভাষায় বেদ রচিত হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। এতে মূলত স্তোত্র, কবিতা ও যজ্ঞ-সংক্রান্ত আচার লিখিত আছে। শত শত বছর সুরে সুরে এসব স্তোত্র ও শ্লোক লোক মুখে প্রচলিত ছিল। লিপিবদ্ধ করা হয়েছে অনেক পরে।

বেদ চারটি, যা একসঙ্গে‘চতুর্বেদ নামে পরিচিতি। বেদগুলো হলো ঋগ্‌বেদ বা স্তোত্রসংগ্রহ, যা দেবতাদের উদ্দেশে রচিত স্তবগান। সামবেদ বা সুর ও গানভিত্তিক মন্ত্র, যা মূলত যজ্ঞে গাওয়া হতো। যজুর্বেদ, যা মূলত যজ্ঞকর্ম সঠিকভাবে সম্পাদনের নিয়ম ও আচারবিধি। অথর্ববেদে রয়েছে আত্মরক্ষা, আরোগ্য ও দৈনন্দিন জীবনের মন্ত্র ও প্রার্থনা।

প্রতিটি বেদের চারটি অংশ রয়েছে। তা হলো সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক ও উপনিষদ। শুধু ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতি, দর্শন ও সমাজজীবন বোঝার ক্ষেত্রেও বেদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৭। দ্য ওডিসি

গ্রিসে আবিষ্কৃত একটি মাটির ফলকে খোদাই করা আছে ‘ওডিসি’ মহাকাব্যের ১৪তম র‌্যাপসোডির ১৩টি শ্লোকছবি: রয়টার্স
গ্রিক কবি হোমারের এই মহাকাব্য অত্যন্ত প্রভাবশালী। ধারণা করা হয়, খ্রিষ্টপূর্ব ৭২৫-৬৭৫ সালের মধ্যে এটি লেখা হয়েছে। এতে ১২ হাজারের বেশি পঙ্‌ক্তি রয়েছে।
ট্রয় যুদ্ধের পর বীর ওডিসিউসের দীর্ঘ ১০ বছরের যাত্রাই এই মহাকাব্যের মূল বিষয়। এতে তিনি কীভাবে নিজ রাজ্যে ও পরিবারে কাছে ফিরে আসেন, তার নাটকীয় ও বীরত্বপূর্ণ বর্ণনা রয়েছে।

হোমারের আরেক মহাকাব্যের নাম ‘ইলিয়াড’। ইতিহাসবিদ ও দার্শনিক প্লুটার্কের মতে, আলেজান্ডার দ্য গ্রেট নিজের বালিশের নিচে বইটির একটি কপি রাখতেন। কিন্তু বিষয়টি কতটুকু সত্য, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, ‘ইলিয়াড’ আর ‘ওডিসি’ আসলে দুজন ভিন্ন লেখকের রচনা।

৮। ‘মিদিয়া’

গ্রিক নাট্যকার ইউরিপিদিসের এই বিখ্যাত নাটকটি খ্রিষ্টপূর্ব ৪৩১ সালে লেখা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তৎকালীন সমাজে নারীর অবস্থান ও ক্ষমতার চ্যালেঞ্জ এতে ফুটে উঠেছে। মিদিয়া চরিত্রটি বেশ শক্তিশালী।

ওই সময়ে সামাজিক নিয়মের বিরুদ্ধে গিয়ে একজন নারী হয়েও তিনি ক্ষমতাবান একজন পুরুষের বিরুদ্ধে কীভাবে লড়াই করেন, তাই এ ট্র্যাজেডির মূল গল্প। গ্রিক ভাষায় মিদিয়া অর্থ চতুরতা বা কৌশল। নাটকে মিদিয়াকে কখনো কখনো জাদুকরী চরিত্রে দেখা যায়।

সক্রেটিস ছিলেন ইউরিপিদিসের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ধারণা করা হয়, ইউরিপিডিসের কাজে সক্রেটিসের প্রভাব রয়েছে। বিশেষ করে ‘মিদিয়া’র কাহিনিতে আবেগের প্রভাব ও মানুষের মানসিকতা বর্ণনায় সক্রেটিসের প্রভাব রয়েছে বলে মনে করা হয়।

৯। দ্য সিম্পোজিয়াম

প্রাচীন গ্রিসে সিম্পোজিয়াম ছিল একধরনের প্রাণবন্ত মিলনমেলা। এতে উচ্চপদস্থ ঘনিষ্ঠ পুরুষ বন্ধুরা জড়ো হয়ে নিজেদের কবিতা আবৃত্তি এবং তা নিয়ে আলোচনা করতেন। পাশাপাশি সংগীত, দেবতা ও দৈনন্দিন বিষয় নিয়েও তাঁরা আলোচনা করতেন।

অনেক সময় তাঁরা মজা করতেন, নানা গল্প শোনাতেন বা পরচর্চা করতেন। মানে রাষ্ট্রের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এই মেলায় যেন একঘেয়ে জীবন থেকে সাময়িকভাবে ছুটি পেতেন।

খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় ৩৮৫ সালে লেখা প্লেটোর বিখ্যাত বই ‘সিম্পোজিয়াম’–এ উল্লিখিত মেলার মতো এক কল্পিত বৌদ্ধিক মিলনমেলার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এতে তাঁর যুব বয়সের আদর্শ ব্যক্তিত্ব, শিক্ষক সক্রেটিস ও অন্যান্য শিষ্যের মধ্যে দার্শনিক বাহাস হয়। প্লেটোর সমসাময়িক অন্যরা এ ধরনের বই লিখেছেন।

১০। দ্য টেল অব গেঞ্জি

‘দ্য টেল অব গেঞ্জি’ লেখার সময় জাপানে কবিতা ও কল্পকাহিনি লেখার বিশেষ খ্যাতি ছিলছবি: দ্য লাইব্রেরি অব কংগ্রেসের ওয়েবসাইট থেকে
এখন পর্যন্ত যে ৯টি প্রাচীন বইয়ের উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে ‘দ্য টেল অব গেঞ্জি’ তুলনামূলকভাবে নতুন। এটিকে সাধারণভাবে প্রথম উপন্যাস হিসেবে ধরা হয়। এই বইয়ের লেখক একজন নারী। তাঁর নাম মুরাসাকি শিকিবু। কিন্তু এটা বইটির প্রকৃত লেখকের নাম কি না, তা নিয়ে নানা মত রয়েছে।

প্রাচীন জাপানের রাজপুত্র হিকারু গেঞ্জিকে নিয়ে বইটি লেখা হয়েছে। তিনি জাপানের এক কাল্পনিক সম্রাটের ছেলে। গল্পে তাঁর প্রেম, রাজদরবারের জীবন, ব্যক্তিগত দুঃখ-কষ্ট এবং রাজনীতির টানাপোড়েনের বর্ণনা রয়েছে।

বইটি লেখা হয়েছিল প্রায় ১০০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে। তখন জাপানে কবিতা ও কল্পকাহিনি লেখার বিশেষ খ্যাতি ছিল। দেশটির তখনকার হেইয়ান যুগের সম্ভ্রান্ত নারীরা প্রচুর অবসর সময় পেতেন। এ সুযোগে তাঁরা সাহিত্যচর্চা করতেন। ইংরেজি অনুবাদে প্রায় ১৩ হাজার পৃষ্ঠার বইটি ৫৪ খণ্ডে বের হয়েছে।

যে সময়ে ‘দ্য টেল অব গেঞ্জি’ লেখা হয়, তখন জাপানের পুরুষেরা পাণ্ডিত্বপূর্ণ চীনা ভাষায় লিখতেন। কিন্তু নারীরা ব্যবহার করতেন জাপানি সিলাবিক লিপি। শিক্ষার উচ্চ মানের কারণে চীনারা তখন জাপানকে ‘কুইন কান্ট্রি’ বা রানির দেশ বলেও ডাকতেন।

সূত্র: মেন্টাল ফ্লস অবলম্বনে

এ জাতীয় আরো সংবাদঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

জনপ্রিয় সংবাদঃ

সাম্প্রতিক মন্তব্য