জয়পুরহাট প্রতিনিধি: নবান্নের উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেছে জয়পুরহাটের কালাই। অগ্রহায়ণের প্রথম দিনের কুয়াশা ভেদ করে সকালবেলার সোনালি আলোয় পাঁচশিরা বাজারে বসেছে পুরোনো ঐতিহ্যের শতবর্ষী মাছের মেলা। ভোর ৪টা থেকেই মানুষ জমতে শুরু করেছে নতুন ধান ঘরে তোলার আনন্দে বাড়ি বাড়িতে যখন পিঠা-পুলি, পায়েস আর খইয়ের ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ে, তখন সেই উৎসবের রঙ আরও গাঢ় করে তোলে এই মাছের মেলা।
এ মেলার ইতিহাস শত বছরেরও বেশি। পূর্বপুরুষদের আমল থেকে নবান্নের দিনই শুরু হয় আত্মীয়-স্বজনের মিলনমেলা। মাছ ব্যবসায়ীরা সপ্তাহখানেক আগে থেকেই বড় সাইজের মাছ সংগ্রহ করে রাখেন, মাইকিং করে জানান আগমনী বার্তা। আর সারা জেলা থেকে মানুষ ছুটে আসে কেউ দেখতে, কেউ কিনতে, কেউবা শুধু উৎসবের অংশ হতে।
এ বছরও নজর কেড়েছে বিশাল সব মাছ ৩৫ কেজির সিলভার কার্প ৪২ হাজার টাকায়, ১৯ কেজির কাতলা ২৫ হাজারে বিক্রি হয়েছে। বড় মাছের কেজিপ্রতি দাম ছিল ৭০০ থেকে ১৫০০ টাকা, আর বাঘাইর-চিতলের দাম ১৩০০ থেকে ২০০০ টাকার ঘরে। মাঝারি মাছ মিলেছে ৩০০–৪০০ টাকায়।
মেলার সবচেয়ে আনন্দময় দৃশ্য জামাইদের প্রতিযোগিতা। কে বেশি বড় মাছ কিনে শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে যাবে, সেটিই যেন এক ধরনের মর্যাদা! বগুড়া থেকে আসা মিজানুর রহমান ১২ কেজির কাতলা কিনে জানান, নবান্নে মাছ তো অবশ্যই লাগে, দাম যতই হোক। আবার সতেন চন্দ্র বর্মণ প্রায় ৪৪ হাজার টাকায় দুটি মাছ কিনে খুশিতে জানিয়েছেন পরিবারের আনন্দই তার আসল লাভ।
উপজেলাজুড়ে আজ এক উৎসবের আমেজ। শিক্ষক নারায়ণ বাবুর ভাষায়, এই মেলা শুধু বাজার নয় এটি মানুষের মিলনস্থল। ব্যবসায়ীরাও সন্তুষ্ট; কেউ কেউ বলেছেন তারা ১৫–২০ মণ পর্যন্ত মাছ বিক্রি করেছেন।
মৎস্য বিভাগও নজরদারিতে রয়েছে, নষ্ট বা বিষাক্ত মাছ যাতে না ওঠে সেদিকে কঠোর তদারকি চলছে। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জানান, একদিনেই অন্তত এক কোটি টাকার কেনাবেচা হয় এই মেলায়, যা স্থানীয় চাষিদেরও উৎসাহিত করছে।
কালাই পৌরসভার প্রশাসক শামিমা আক্তার জাহান বলেন, নবান্ন গ্রামের প্রত্যেক ঘরের আনন্দকে এক সুতায় বেঁধে রাখে। ভবিষ্যতে মেলার পরিধি আরও বাড়ানোর পরিকল্পনাও রয়েছে।
গ্রামবাংলার কৃষকদের কাছে নবান্ন নতুন ধানের সুবাসে নতুন সূচনা। আর সেই আনন্দকে কেন্দ্র করেই শতবর্ষী পাঁচশিরা মাছের মেলা আজও বাঁচিয়ে রেখেছে লোকায়ত ঐতিহ্য, মিলন আর উৎসবের রঙ।
