অনলাইন ডেস্ক: কোনও ঘোষণা বা প্রস্তুতি ছাড়াই যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে সন্ধ্যা ৬টার পর সব ধরনের আমদানি-রফতানি কার্যক্রম বন্ধ করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। কাগজপত্রবিহীন ও চোরাই পণ্য প্রবেশ ঠেকাতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। তাদের এমন সিদ্ধান্তে দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দরে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। দুই দেশের সীমান্তজুড়ে পণ্যবাহী ট্রাকের দীর্ঘ জট সৃষ্টি হয়েছে। বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ী, আমদানিকারক ও রফতানিকারকরা।
তবে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলছে, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অপরদিকে, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ বলেন, এ ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে, তবে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।
বন্দর সূত্র জানায়, বাংলাদেশের বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল সীমান্তে প্রতিদিন আটকে থাকছে দেড় হাজারেরও বেশি পণ্যবাহী ট্রাক। এসব ট্রাকে রয়েছে ফল, সবজি, মাছ, কসমেটিকস, রাসায়নিক কাঁচামালসহ দ্রুত পচনশীল পণ্য, যেগুলো নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
আমদানি-রফতানিকারক সমিতির হিসাবে, প্রতিদিন প্রায় ১০০-১৫০ কোটি টাকার পণ্য খালাস আটকে থাকায় ব্যবসায়ীরা যেমন বড় ক্ষতির মুখে পড়ছেন, তেমনি সরকারও প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দুর্নীতির মাধ্যমে কেউ অবৈধ মালামাল আমদানি করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা না নিয়ে সবার ওপর দোষারোপ করে আমদানি-রফতানি বন্ধ করতে পারে না কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী মশিউর রহমান বলেন, ‘পূর্ব ঘোষণা ছাড়া সন্ধ্যার পর বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ করায় ব্যবসায়ীরা হতবাক। দুই পাশে শত শত ট্রাক আটকে আছে, কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। এভাবে সিদ্ধান্ত চলতে থাকলে ব্যবসায়ীরা বিকল্প হিসেবে ভোমরা, হিলি বা সোনা মসজিদমুখী হতে বাধ্য হবে, এতে সরকারের রাজস্বও কমে যাবে।’
ভারতের পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, ‘বাংলাদেশের এই একতরফা সিদ্ধান্তে ভারতীয় ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। দুই দেশের বাণিজ্যে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। পেট্রাপোল বন্দরে প্রতিদিন ট্রাক জটের মধ্যে পড়ছি। প্রতিদিন হাজারেরও বেশি ট্রাক পণ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকছে পেট্রাপোল বন্দরে। বিগত সময়ে রাত ১২টা পর্যন্ত আমদানি-রফতানি চালু ছিল।’
বেনাপোলে বন্দরের আমদানি-রফতানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মতিউর রহমান বলেন, ‘সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট পক্ষদের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত ছিল। তা না করে একতরফাভাবে সময়সীমা কমানো হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ী, কর্মচারী এবং সরকারও। আমরা কাস্টমস কমিশনারের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রতিদিন অন্তত ৪০০-৫০০ আমদানিমুখী ট্রাক প্রবেশ নিশ্চিত করা জরুরি।’
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক লতা বলেন, ‘কয়েকদিন আগে আমাদের সঙ্গে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের একটি বৈঠক হয়েছিল। তারা প্রস্তাব করেছিল সন্ধ্যা ৬টার পর আমদানি-রফতানি বন্ধ থাকার। আমরা বলেছি, বন্দর ব্যবহারকারী সবার সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জানানো হবে।
বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক শামীম হোসেন রেজা বলেন, ‘আমরা বন্দর পরিচালনা করি। তবে কাস্টমস অনুমোদন ছাড়া কোনও পণ্য ক্লিয়ার করা সম্ভব নয়। আকস্মিক এই সিদ্ধান্ত রাজস্ব এবং বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।’
এ বিষয়ে জানতে বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার খালিদ মো. আবু হোসেনের মোবাইলে কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। এখানে যোগদানের পর থেকে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন না। ফোন দিলে রিসিভ করেন না। কাস্টমস হাউজের কোনও কর্মকর্তাকেও দায়িত্ব দেননি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার জন্য। এর আগে একজন সহকারী কমিশনার পর্যায়ের কর্মকর্তা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতেন।
তবে কাস্টমসের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, অভ্যন্তরীণ প্রশাসনিক সমন্বয়ের কারণে সাময়িকভাবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দ্রুত সমাধান হতে পারে।
