আন্তর্জাতিক. অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল ও হামাসের ভয়াবহ যুদ্ধের দুই বছর পূর্ণ হলো আজ মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর)। দুই বছরের এই সংঘাতে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন বিপর্যস্ত হয়েছে; মৃত্যু হয়েছে হাজার হাজার শিশুরও। তবে দীর্ঘ রক্তপাতের পর অবশেষে দেখা দিয়েছে একটুখানি আশার আলো—যুদ্ধবিরতি ও শান্তি চুক্তির সম্ভাবনা। বিবিসির যুদ্ধবিষয়ক সাংবাদিক জেরেমি বোয়েনের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে সেই সম্ভাবনার চিত্র।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক ইসরায়েল আক্রমণে প্রায় ১,২০০ জন নিহত হয়েছিলেন, যাদের অধিকাংশই ছিলেন সাধারণ মানুষ। এছাড়া বন্দি করা হয়েছিল ২৫১ জনকে। ইসরায়েলের দাবি, বর্তমানে বন্দিদের মধ্যে ২০ জন জীবিত, আর ২৮ জনের মৃতদেহ ফেরত চাওয়া হয়েছে। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল গাজায় ভয়াবহ সামরিক অভিযান চালিয়ে এখন পর্যন্ত ৬৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে, যার মধ্যে প্রায় ১৮ হাজার শিশু।
এখন উভয় পক্ষই যুদ্ধ শেষ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে। ইসরায়েলি সমাজে যুদ্ধবিরতির পক্ষে জনমত বাড়ছে—অনেকে বন্দিদের মুক্তি ও শান্তি প্রত্যাশা করছে। অন্যদিকে গাজার দুই মিলিয়নেরও বেশি মানুষ মানবিক সংকটে পড়েছে—খাদ্য, পানি ও চিকিৎসার তীব্র অভাবে তাদের জীবন চলছে দুর্বিষহ অবস্থায়।
হামাসের যুদ্ধক্ষমতা এখন আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে। তারা নগরযুদ্ধে টিকে থাকার লড়াই চালাচ্ছে। অন্যদিকে ইসরায়েল চাইছে হামাসকে সম্পূর্ণভাবে নিষ্ক্রিয় করতে এবং গাজাকে নিরস্ত্রীকরণ করতে। এই অবস্থায় মিশর ও কাতারের মধ্যস্থতায়, যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় ভূমিকা নিয়ে শান্তি আলোচনার নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এই আলোচনার ভিত্তি হচ্ছে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২০ দফা ‘গাজা শান্তি পরিকল্পনা’। এতে গাজার শাসনব্যবস্থা ও জিম্মিদের মুক্তির বিষয়টি অগ্রাধিকার পেলেও পশ্চিম তীর বা পূর্ণ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনো সুস্পষ্ট উল্লেখ নেই। সৌদি আরব অবশ্য স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে—ফিলিস্তিনের স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন ছাড়া বড় কোনো চুক্তি সম্ভব নয়।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এখনও ‘সম্পূর্ণ বিজয়’-এর লক্ষ্যে অবিচল। তার দৃষ্টিতে, হামাসের ধ্বংস, গাজার নিরস্ত্রীকরণ এবং বন্দিদের ফেরত পাওয়া ছাড়া যুদ্ধ শেষ নয়। অন্যদিকে হামাসও তাদের অস্ত্র সম্পূর্ণ সমর্পণ করতে রাজি নয়। ট্রাম্প ও মার্কিন প্রশাসনের চাপেই এখন আলোচনার দরজা কিছুটা খুলেছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানিয়েছেন, কয়েক দিনের মধ্যেই বোঝা যাবে হামাস শান্তি চায় কিনা।
তবে দুই পক্ষেরই অভ্যন্তরে কঠোর অবস্থান নেওয়া গোষ্ঠী আছে, যারা যুদ্ধ থামাতে অনিচ্ছুক। হামাসের সামরিক কমান্ডাররা শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে। আর নেতানিয়াহুর ডানপন্থী সমর্থকরা গাজায় নতুন ইহুদি বসতি স্থাপনের পরিকল্পনাও করছে।
যুদ্ধবিরতির এই উদ্যোগ সফল হবে কিনা, তা এখনো অনিশ্চিত। তবে দুই বছরের রক্তপাতের পর এই আলোচনাই হয়তো গাজার পুনর্গঠন, বন্দিদের মুক্তি এবং ভবিষ্যতের শান্তির পথে প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে।তথ্যসূত্র: বিবিসি
