দৈনিক আর নিউজ: গত ১২ মাসে দক্ষিণ এশিয়ার দুটি দেশে গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে। বাংলাদেশ এবং নেপালের রাজনীতি, ইতিহাস ও সমাজ সম্পূর্ণ ভিন্ন হলেও দুর্নীতি ও ঔদ্ধত্যে ফাঁপা হয়ে যাওয়া দুর্বল গণতন্ত্রের মাধ্যমেই উভয় দেশ বিপর্যয়ে পড়েছে। তাদের নির্বাচিত নেতারা না পেরেছেন বিশ্বাসযোগ্যভাবে দেশ চালাতে, না পেরেছেন জনগণের ক্ষোভকে সামাল দিতে। যার ফলে তাদের সরকারের বিরুদ্ধে গণ-অভ্যুত্থান হয় এবং সরকারগুলো ক্ষমতাচ্যুত হয়। বাহ্যিকভাবে, এ সমান্তরাল চিত্রগুলো বেশ চমকপ্রদ। কিন্তু এর গভীরে রয়েছে কিছু সূক্ষ্ম পার্থক্য, যা এ দেশগুলোর ভবিষ্যৎ এবং ভারতের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নির্ধারণ করবে।
বাংলাদেশে জনগণের ক্ষোভ সরাসরি আওয়ামী লীগ সরকারের দিকে নিবদ্ধ ছিল। বিক্ষোভ তীব্র হলে দলটির নেতারা পালিয়ে যান এবং শেখ হাসিনা, যিনি বাংলাদেশের রাজনীতির অটল মাতৃমূর্তি হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন, একপর্যায়ে কোণঠাসা হতে বাধ্য হন। নেপালে জনগণের ক্ষোভ ছিল আরও ব্যাপক : কোনো নির্দিষ্ট দল নয়, বরং জনতার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ শাসকশ্রেণির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়। তারা রাস্তা ও পার্লামেন্ট দখল করলে আত্মরক্ষার জন্য শাসকরা পালাতে বাধ্য হয়। বাংলাদেশের বিক্ষোভ কয়েক সপ্তাহ ধরে চলেছিল। আওয়ামী নেতৃত্বাধীন সরকার কঠোরভাবে এ আন্দোলন দমন করার চেষ্টা করে, যতক্ষণ না এটি শেষ পর্যন্ত ঢাকার রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু নেপালের আগুন মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে দ্রুত জ্বলে ওঠে, যা সরকার উৎখাত করার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল।
এই ফাঁকে একথা পরিষ্কার করা দরকার যে, জেন-জিকে একটি একক, আদর্শবাদী যুবগোষ্ঠী মনে করার ধারণাটি ভুল। এ মুহূর্তে মনে হচ্ছে, যে নেপালি যুবকরা স্বচ্ছতার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছিলেন, তবে তারাই যে পরে ভবন জ্বালানো ও দোকানপাটে লুটপাট করা দল, তা বলা যাবে না। এ বিক্ষোভে নিম্নবিত্ত শ্রেণির একটি বড় অংশও যোগ দিয়েছিল। তবে এতে কট্টর মাওবাদী, রাজতন্ত্রপন্থি এবং হিন্দুত্ববাদী উপাদানদের উপস্থিতিও লক্ষ করা গেছে।
বাংলাদেশে, এ আন্দোলন থেকে তৈরি হওয়া সুযোগ কাজে লাগাতে ইসলামি গোষ্ঠীগুলো দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে। হাসিনার সরকারকে ভারত সমর্থন করে-এমন ধারণা ব্যাপকভাবে প্রচলিত থাকায় এ গোষ্ঠীগুলো আরও সুবিধা পেয়েছিল। সম্প্রতি জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো জয়লাভ করেছে। যখন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে, তখন জামায়াত খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) পরে দ্বিতীয় শক্তিশালী দল হিসাবে আত্মপ্রকাশ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
