Site icon Daily R News

প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস বিশ্বব্যাংকের চলতি অর্থবছরে ৪.৮ শতাংশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: বছরের শুরুতে নানা ধাক্কার মুখে পড়লেও শেষ প্রান্তে এসে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। রপ্তানির জোয়ার, প্রবাসী আয়ের রেকর্ড এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধিতে অর্থনীতি আবারও গতি ফিরে পেয়েছে—এমন তথ্য উঠে এসেছে বিশ্বব্যাংকের সদ্য প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ উন্নয়ন হালনাগাদ’ প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, মধ্যমেয়াদে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ঊর্ধ্বমুখী ধারায় থাকবে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৮ শতাংশে পৌঁছাবে এবং ২০২৬-২৭ সালে তা ৬ দশমিক ৩ শতাংশে উন্নীত হবে। তবে এই ধারা বজায় রাখতে সাহসী ও সময়োপযোগী অর্থনৈতিক সংস্কার গ্রহণের ওপর জোর দিয়েছে সংস্থাটি।

বিশ্বব্যাংক জানায়, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার প্রবর্তনের ফলে বৈদেশিক চাপ কিছুটা কমেছে। রপ্তানি বৃদ্ধি ও আমদানি হ্রাসে চলতি হিসাবের ঘাটতি সংকুচিত হয়েছে, ফলে রিজার্ভও স্থিতিশীল অবস্থায় ফিরেছে। কঠোর মুদ্রানীতি, ভালো ফসল এবং জরুরি খাদ্যপণ্যে শুল্ক হ্রাসের কারণে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমলেও, রাজস্ব আয় দুর্বলতা ও ভর্তুকি-সুদের ব্যয় বৃদ্ধি বাজেট ঘাটতিকে আরও বিস্তৃত করেছে।

তবে প্রতিবেদনটি শ্রমবাজার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের হার বেড়েছে এবং শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণের হার ৬০ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে কমে ৫৬ দশমিক ৯ শতাংশে নেমেছে। এর মধ্যে নারীর অংশগ্রহণের হ্রাস সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। নতুন তিন মিলিয়ন কর্মক্ষম মানুষের মধ্যে ২৪ লাখই নারী, যারা শ্রমবাজারে প্রবেশ করতে পারেননি।

বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের বিভাগীয় পরিচালক জ্যাঁ পেসমে বলেন, “বাংলাদেশের অর্থনীতি স্থিতিস্থাপকতা দেখিয়েছে, কিন্তু এটিকে স্বাভাবিক ধরে নেওয়া যাবে না। প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে কর আদায় বৃদ্ধি, ব্যাংক খাতের দুর্বলতা দূর করা, জ্বালানি ভর্তুকি হ্রাস এবং বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়নের সংস্কার জরুরি।”

প্রতিবেদনটি আরও জানায়, গত দুই দশকে কর্মসংস্থান ও জনসংখ্যার ঘনত্ব ক্রমেই ঢাকা ও চট্টগ্রামমুখী হয়েছে। আঞ্চলিক বৈষম্য কমাতে এবং দেশের সর্বত্র কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য নতুনভাবে স্থানিক উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।

একইসঙ্গে প্রকাশিত দক্ষিণ এশিয়া উন্নয়ন প্রতিবেদন-এ বলা হয়েছে, এ অঞ্চলে প্রবৃদ্ধি এ বছর ৬ দশমিক ৬ শতাংশে পৌঁছাবে। তবে বৈশ্বিক মন্দা, জলবায়ু পরিবর্তন ও আর্থিক অস্থিরতা বড় ঝুঁকি হিসেবে রয়ে গেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও বাণিজ্য উন্মুক্ততার সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে দক্ষিণ এশিয়া উৎপাদনশীলতা, কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগে নতুন গতি আনতে পারবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

Exit mobile version