Site icon Daily R News

সদরঘাটের অঘোষিত সম্রাট সুমন ভূঁইয়া

রনি মজুমদার: এক সময় সদরঘাটের ছোট্ট কোণে মাথায় গামছা বেঁধে কুলির কাজ করতেন সুমন ভূঁইয়া। আজ তিনি দক্ষিণ ঢাকা ঘাটপাড়ার রাজনীতি, চাঁদাবাজি, দখল, টেন্ডারবাজি এবং অপরাধের এক ভয়ঙ্কর নাম হয়ে ওঠেছে। কীভাবে সাধারণ একজন দিনমজুর হয়ে ওঠলেন কোটি টাকার সম্পদের মালিক?

সুমন ২০০১ সালে সদরঘাটে কুলি হিসেবে কাজ শুরু করেন, ২০০৪ সালে ভ্যানচালক থাকাকালে বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম খানের ঘনিষ্ঠতায় জড়িয়ে পড়েন শ্রমিক রাজনীতিতে। রাজনৈতিক ছায়া ও আশীর্বাদের ফলে ২০১০ সালে ঘাট শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক, ২০২১ সালে মহানগর দক্ষিণ শ্রমিক দলের আহ্বায়ক পদে পদোন্নতি পান।

এরপর শুরু হয় তার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অধ্যায়। ২০১২ সালে সোহেল হত্যা মামলায় ১ নম্বর আসামি, কেরানীগঞ্জে দেলোয়ার হত্যা মামলায় ৩ নম্বর আসামি হিসেবে নাম উঠে আসে তার। প্রতিবারই অদৃশ্য চাপে মামলাগুলো ধামাচাপা পড়ে যায়।

সম্প্রীতি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ঘাট শ্রমিক দল নামের ভুয়া রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা চাঁদাবাজি চালাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। শ্রম মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, রেজিস্ট্রেশনটি অনেক আগেই দুর্নীতির কারণে স্থগিত করা হয়েছিল।

সদরঘাট ও আশপাশের ঘাট, গুদাম, হকার্স মার্কেট থেকে প্রতিদিন গড়ে এক লক্ষ টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। কেউ চাঁদা দিতে না চাইলে ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়াসহ প্রাণ নাশের হুমকি দেওয়া হয়। জননী হোটেলের মালিক সাদেক এবং মুন্সীগঞ্জের সাবেক চেয়ারম্যানের কাছ থেকেও বড় অঙ্কের চাঁদা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

সদরঘাট হকার্স মার্কেটের ৫০৫ নম্বর দোকান, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদে আধুনিক ফ্ল্যাটসহ সব মিলিয়ে তার নামে কয়েক কোটি টাকার সম্পদ রয়েছেন। অথচ গত ১৭ বছরে বৈধ আয়ের কোনো প্রমাণ নেই তার কাছে। সম্প্রতি তিনি ঘাট ইজারা নিয়েছেন মাত্র ৪টি, ৪৩ লক্ষ টাকায় যা আগের বছরের তুলনায়

কয়েক ভাগ কম। সূত্র বলছে, পুরো প্রক্রিয়াটি রাজনৈতিক প্রভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়। সুমনের পাশে রয়েছে কয়েকজন ঘনিষ্ঠ সহযোগী দেলোয়ার, রুহুল আমিন, কাশিয়ার কিরন সোবাহান, যুবদল কর্মী মোস্তফা এবং “মাস্টারমাইন্ড” নামেও একজন রয়েছেন। তারা মিলে সদরঘাটে অঘোষিত সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে, যেখানে ভয় ও চাঁদাই যেন তাদের নিয়ম।

বিএনপির প্রবীণ নেতাদের কথায়, সুমনের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। একজন নেতা বলেন, “যাকে কুলি হিসেবে দেখেছি, আজ তার ভয়ে আমরা চুপ। প্রতিবাদ করলে বিপদ হয়।” ভুক্তভোগীরা এখনও মামলা করতে ভয় পান।কেউ অভিযোগ করলেও হুমকি দিয়ে মামলা তুলে নিতে বাধ্য করা হয়েছে। রাজনীতি ও দুর্বৃত্তায়ন এই সুমনের উত্থানের মূল চাবিকাঠি।

Exit mobile version